শেখ নাদীর শাহ্::
সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অন্তত ৫ শ’ বছরের পুরনো প্রায় ৫ একর আয়তনের ঐতিহ্যবাহী সরল খাঁ দীঘিটি সংরক্ষণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও ব্যবহার উপযোগী করতে কার্যক্রম শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন।
দীর্ঘ দিন ধরে দীঘিটিতে কচুরিপনা, আগাছা বন-জঙ্গলে ঢেঁকে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। স্থানীয়দের পক্ষে দীঘির রক্ষনা-বেক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগীর দাবি দীর্ঘ দিনের। তবে এর দেখভাল ও ঐতিহ্য ফেরাতে কারো কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ ছিলনা। সর্বশেষ বর্তমান ইউএনও মুহাম্মদ আল-আমিন যোগদানের পর জনস্বার্থে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) থেকে কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কারের মাধ্যমে এর রক্ষনা-বেক্ষণ, ব্যবহার উপযোগী ও সৌন্দর্য বর্ধনের বিশেষ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন উপস্থিত থেকে এর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্ভোধন করেন। এ সময়ে প্যানেল মেয়র শেখ মাহবুবুর রহমান রঞ্জু, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা লালু সরদার, কাউন্সিলর মো. আব্দুল গফফার মোড়ল, উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারী আ. বারী, পৌর ও রাড়–লী ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা লতিফা আখতার, মাওলানা আব্দুল মান্নান, আব্দুর রাজ্জাক সরদারসহ স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের সরল গ্রামের বেতগ্রাম-পাইগাছা প্রধান সড়কের কোল ঘেঁষে প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপর অন্তত ৫শ’ বছরের পুরনো এ দীঘিটি অবস্থিত যা, সরলের পুকুর নামে পরিচিত।
স্থানীয়দের মতে কয়েক’শ বছর পূর্বে পীর সরল খাঁ অলৌকিক ক্ষমতা বলে দীঘিটি খনন করেন। দীঘিটি ঘিরে নানা লোককথার পাশাপাশি রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
স্থানীয়দের কথ্যমতে, সরল খাঁ’র পাইক-পেয়াদারা নৌকায় চড়ে হাট বাজারে যাতায়াত করতেন এবং গাছে নৌকা বেঁধে রাখতেন। সেখান থেকে অত্র এলাকার নামকরণ হয় পাইকগাছা। এছাড়া সরল, বান্দিকাটী, ঘোষাল, লস্করসহ বেশ অনেকগুলো গ্রামের নামকরণ হয়েছে সরল খাঁ ও তার লোক লস্করকে ঘিরে। দীঘিটির একসময় অনেক ঐতিহ্য ছিল। শোনা যায় পুকুরের পানি পান করে বহু মানুষ আরোগ্য লাভ করেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, সরল খাঁ’র নামেই নামকরণ হয় সরল গ্রাম। তার পাইক পেয়াদারা গাছে নৌকা বাঁধতো সেখান থেকেই নাম হয় পাইকগাছা। দীঘির পাশেই যেখানে বাদী-দাসীরা বাস করতো। এখানকার নাম হয় বান্দিকাটী গ্রাম। যেখানে গোশালা ছিল সেখানকার নাম হয় ঘোষাল। লোক লস্কর যেখানে থাকতো সেখানকার নাম হয় লস্কর। এভাবেই সরল খাঁ এবং সরল খাঁ দীঘিকে ঘিরে রয়েছে পাইকগাছার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এছাড়া তৎকালীন সময়ে এই দীঘির পানি পান করে অসংখ্য মানুষ রোগ বালাই থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলেও এলাকায় প্রচার রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, স্বাধীনতা পূর্ব এবং তৎপরবর্তী সময়ে দীঘিটি সদর ইউনিয়ন পরিষদ দেখভাল করতো। এরপর পৌরসভার তত্তাবধায়নে ছিল। কয়েক বছর আগে দীঘিটি খুলনা জেলা প্রশাসকের নামে হওয়ায় দীঘিটির পরিচালনা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার মধ্যে শুরু হয় খানিকটা রশি টানাটানি। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে দীঘিটি পতিত অবস্থায় ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপনা থেকে শুরু করে ভরে গেছে আগাছায়।
সর্বশেষ উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে দীঘিটির পরিচ্ছন্নতা ফেরাতে শুরু হয়েছে এর কচুরিপনা ও আগাছা পরিস্কারের কাজ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, দীঘিটির ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সরকারি অনুদানে দীঘিটির সৌন্দর্য বর্ধন ও চিত্তবিনোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।