নিজস্ব প্রতিনিধি:
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস’র ফোন সেক্সের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার অধিকাংশ মানুষের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিও চিত্রটি।
কাজল কান্তি বিশ্বাস লতা ইউপি চেয়ারম্যানের পাশাপাশি সেখানকার বিজিপি শামুকপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি সরকার দলীয় সংগঠনের সাবেক নেতা ছিলেন। সর্বশেষ দলীয় মনোনয়নে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকৃত ও কূ-রুচীপূর্ণ অসামাজিক কার্যকলাপের ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ায় তাকে চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এমনকি দল ও দলের বাইরে থেকেও বিষয়টি সর্বোচ্চ সমালোচিত হচ্ছে।
সর্বশেষ গত সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে তাকে অপসারণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফোন সেক্সের বিষয়টি ভাইরালের পাশাপাশি বিভিন্ন মিডিয়ায় এনিয়ে ফলাও করে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কাজলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। উল্টো দম্ভের সাথে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলারও হুমকি দিচ্ছেন। সার্বিক ঘটনায় তার খুঁটির জোর নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে মহল বিশেষ। অনেকের প্রশ্ন, এত কিছুর পরও কোন বলে তিনি প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? কারাই বা তাকে শেল্টার দিচ্ছেন? আর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ কেন নিচ্ছেননা? তবে কি তিনি এতবড় ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছেন? এমন নানা প্রশ্নে ভারী হয়ে উঠছে সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের তৃণমূল।
জানাগেছে, উপজেলার লতা ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মৃত গুরুপদ বিশ্বাসের ছেলে কাজল কান্তি বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও কলের মাধ্যমে জনৈকা কিশোরীর সাথে ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ফোন সেক্সে মিলিত হন। যার একটি ভিডিও চিত্র ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে যা, ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও পৌছে গেছে এ ভিডিও’র কপি। এনিয়ে অনলাইনসহ দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সাথে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। গত প্রায় সপ্তাহজুড়ে খবরটি রয়েছে টক অব দ্য উপজেলা।
স্থানীয়দের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিডিওটি দেখতে এখনো মোবাইল স্ক্রিনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সাবেক একজন প্রভাবশালী নেতা। দলীয় মনোনয়নে দ্বিতীয় বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে সর্বশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অপকীর্তিতে তাকে নিয়ে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে কারা কিভাবে ভিডিওটি সংগ্রহ করেছে কিংবা তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে তার বিষদ জানা সম্ভব না হলেও বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশে রীতিমত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপেছেন প্রভাবশালী এ ইউপি চেয়ারম্যান। দেখে নেওয়ার হুমকিসহ আইসিটি আইনে মমলারও ভয় দেখাচ্ছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।
ঘটনার শুরুতে দু’একদিন বাড়ির বাইরে না বেরুলেও বর্তমানে বহর নিয়ে বেরুচ্ছেন বাজারে। পরিষদেও যাচ্ছেন। তবে, এখনো তার সাথে দেখা করতেও লজ্জাবোধ করছেন পরিষদের সাদস্যদের থেকে শুরু করে তার পক্ষের নির্বাচনী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। যদিও ঘটনায় ন্যুনতম লজ্জাবোধ কিংবা অনুশোচনা নেই তার মধ্যে। তাকে দেখে অন্তত তেমনটাই মনে হচ্ছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় তাকে নিয়ে প্রকাশিত খবরে ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি অনেকে মন্তব্য করেছেন তার কাছে স্থানীয় নারী সমাজও নিরাপদ নয়। অনেক এলাকায় ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনের প্রস্তুতি চলছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
এব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাসের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে পরিষদের সাবেক এক ইউপি সদস্য কৃষ্ণ রায় বলেন, ঘটনাটি লজ্জাজনক। আমরা এর বিচার চাই। পাশাপাশি স্থানীয় বিজিপি শামুকপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ থেকেও তার অপসারণ দাবি করেন সাবেক এ ইউপি সদস্য ও স্থানীয় সংবাকর্মী।
তবে স্থানীয় বিএনপি নেতা গাজী ইব্রাহীম হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান তার বাল্যবন্ধু। দীর্ঘ দিন তার সাথে চলাচলে এমন কোন ঘটনা চোখে পড়েনি তার। বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক বলেও মনে করছেন তিনি।
সর্বশেষ সোমবার সাবেক ইউপি সদস্য মো: আরমগীর খলিফা, সোহরাব গোলদারসহ স্থানীয় শতাধিক ব্যাক্তি তার অপসারণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগপত্রের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফরোয়ার্ডিং দেওয়া হয়েছে।