শেখ দীন মাহমুদ::
সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছায় স্বপ্ন দেখাচ্ছে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মরিচ চাষ। ইতোমধ্যে উপজেলার গড়ইখালীর শিক্ষিত বেকার তরুণ কৃষক মলয় মন্ডল এ প্রযুক্তির স্পর্ষে সফলতা পেয়েছেন। গত বছরের মাত্র ১২ কাঠার মরিচ ক্ষেতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্বপ্নবাজ সাহসী এ তরুণ এবার আবাদ করেছেন, ১ বিঘা জমিতে। ইতোমধ্যে গত দু’দিনে তার ক্ষেত থেকে আহরণ করা হয়েছে অন্তত ১১ মণ মরিচ। উৎপাদনের পাশাপাশি চাহিদা ও বাজার দরে ঈর্ষান্বিত সফলতায় ভর করে আগামীতে এলাকার পাশাপাশি উপজেলাময় স্মার্ট পদ্ধতির মরিচ চাষে অনেককেই অনুপ্রাণিত করছেন।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তি’র মাধ্যমে মালচিং পেপার পদ্ধতি (পলিথিনে ঢেকে) ব্যবহার করে চলতি মৌসুমে কেবল কৃষি সমৃদ্ধ গড়ইখালী ইউনিয়নে মরিচ আবাদ হয়েছে ৩৫ বিঘা জমিতে।
গড়–ইখালীর ঘোষখালী নদী তীরবর্তী হোগলারচকে’র বাসিন্দা কালিপদ মন্ডলের ছেলে তরুণ কৃষক মলয় মন্ডল (২৫) তার মধ্যে অন্যতম। চলতি মৌসুমে তিনি ১বিঘা জমিতে হাইব্রীড জাতের ৪ হাজার ঝালের (মরিচ) চারা রোপন করেন। ইতোমধ্যে যার উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। গত দু’দিনে তার ক্ষেত থেকে অন্তত ১১ মন মরিচ (আহরণ) উঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে জানাযায়, স্মাতক পাশ করা বেকার যুবক মলয় মন্ডল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষন ও পরামর্শ নিয়ে গত মৌসুমে মাত্র ১২কাঠা জমিতে পলিমালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ শুরু করেছিলেন। গেল বছরের ৬ মাসে তার মরিচের ক্ষেত থেকে আয় হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চারা রোপন থেকে শুরু করে সেচ, জৈব কৃষি ও জৈব কীটনাশক, পরিবহন ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয় ৯৭ হাজার টাকা। গত বছরের সোনালী অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্বপ্নবাজ সাহসী এ তরুণ কৃষক মলয় চলতি মৌসুমে আবাদ করেছেন ১বিঘা জমিতে। আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে তার ক্ষেতের সার্বিক অবস্থা খুবই ভাল। ক্ষেতজুড়ে সবুজ সমারোহে থোকায় থোকায় ঝুলছে হাজার হাজার ফুল-ফল।
কৃষিতে তরুণ আইকন মলয় মন্ডল জানান, মালচিং পেপার (গাছের গোঁড়ায় পলিথিনে ঢেকে রাখা) পদ্ধতিতে মরিচ চাষ খুবই লাভজনক। তিনি হাইব্রীড মরিচ চাষে নিজ বীজতলায় কোবিট অর্থাৎ ট্রেতে চারা উৎপাদন করে তা রোপন করেছেন। চলতি মৌসুমে ৪০ হাজার মরিচের চারা বিক্রয় করে লাভবান হয়েছেন। আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশ বিদ্যমান থাকলে এ বছর তিনি মরিচ চাষে আয় লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন ৬ লাখ টাকা।
কৃষিতে জীবন বদলে দেওয়া মলয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আরোও বলেন, তিনি এখন আর চাকুরীর পিছনে ছুটেননা স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান কৃষিতে ভর করে সুন্দর আগামীর।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের গড়ইখালী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ হোসেন জানান, পলিমালচিং পেপার ব্যবহার করে মরিচের চাষ খুবই লাভজনক। এ পদ্ধতিতে ক্ষেতে অতিরিক্ত সেচের প্রয়োজন হয়না, আগাছা জন্মায় না। সেক্ষেত্রে শ্রমিকও কম লাগে।
একই ইউনিয়নের কুমখালী ও আমিরপুর ব্লকের দু’ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আকরাম হোসেন ও আনোয়ার হোসেন বলছিলেন, চলতি মৌসুমে স্মার্ট প্রযুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প থেকে পলিমালচিং ব্যবহার করে ইউনিয়নের ৩৫ বিঘা জমি মরিচ চাষের আওতায় আনা হয়েছে। লবন সহিষ্ণু মরিচের ফলন ও গুণগত মান সত্যিই সন্তোষজনক।
ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায় পলিমালচিং পদ্ধতির ব্যবহারে শুধু গড়–ইখালী নয়, আগামীতে মলয়দের সফলতায় ভর করে উপজেলাময় ডানা মেলবে মরিচের সবুজ আবাদ, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষকের পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।