1. sheikhnadir81@gmail.com : admin :
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
কয়রায় খান সাহেব কোমর উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানীর প্রতিবাদে সমাবেশ নলছিটিতে সর্বজনীন পেনশন স্কীম অবহিতকরণ সম্পর্কিত র‍্যালী ও আলোচনা সভা অপারেশনের নামে নিজেই রোগীদের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মিল্টন সমাদ্দার মুন্সীগঞ্জে টঙ্গীবাড়িতে অজ্ঞাত কিশোরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক দক্ষ ও যুগোপযোগী করে তোলা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী খুলনাসহ ৮ বিভাগে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি খুলনায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা ডুমুরিয়ায় উচচ ফলনশীল পাট বীজ উৎপাদন, পাট চাষ ও পাট পচনের আধুনিক প্রদ্ধতির ক্রমোন্নয়নে কর্মশালা তালায় ১১৫ শিক্ষার্থীর মাঝে অর্থ বিতরণ মুন্সীগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মবিরতি

ডুমুরিয়াসহ যশোর-খুলনার ৪ উপজেলার বহু মানুষের কান্নার কারণ ভবদাহ

  • প্রকাশিত : সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩
  • ১০৩ বার পঠিত

শেখ মাহতাব হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক::

যশোর-খুলনার ৪টি উপজেলার অন্তত ১০ লক্ষাধিক মানুষের এক সময়ের জীবিকার প্রাণ এখন পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে। ভবদাহ এলাকার ২১, ৯ ও ৩ ভেল্ট স্লুইচ গেট। এর মধ্যে ৯ ভেন্ট ও ৩ ভেন্টের গেট দুটি একবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে ২১ ভেন্টের মধ্যে মধ্যে ১৮টি চাপা পড়েছে পলির নিচে। আর এটাই জনপদের দূর্দশার অন্যতম কারণ। পানির সুষ্ঠু সরবরাহ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলতি কৃষি মৌসুমে সেখানকার উৎপাদন হার নেমে এসেছে অর্ধেকে।

সরেজমিনে ভবদাহ জনপদের বাসিন্দারা জানান, স্লুইচ গেটের কপাট সংস্কারপূর্বক পানির সুষ্ঠু সরবরাহ প্রক্রিয়া সচল নাহলে আগামী বছর থেকে ভয়াবহ পানি বন্দী হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। এছাড়া চলতি মৌসুমে বর্ষায় গতি সঞ্চার হলে কৃত্রিম পানি বন্দিতারও আশংকা করছেন কেউ কেউ।

মূলত বর্ষা মৌসুমে ভবদহের ভরাট পানির কাছে হেরে যাচ্ছে বিস্তিীর্ণ অঞ্চলের ভুক্তভোগী মানুষ। ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ, বহু আবাসস্থলের পাশাপাশি কখনো কখনো কবর দেওয়ারও অবস্থা থাকেনা। ক্রমান্বয়ে আগ্রাসী হয়ে ওঠা ভবদহ অনেকের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়েছে, ভেঙ্গে খান খান হয়েছে বহু পরিবারের সাজানো ঘর-গৃহস্থালি। সমস্যা সমাধানে ভবদহকে পুঁজি করে অনেকের আখের গোছানোর পথ খুলেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর-খুলনার ৪টি উপজেলা অভয়নগর, কেশবপুর, মনিরামপুর ও ডুমুরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত দুঃখ দুর্দশার অপর নাম ভবদাহ। এখানে বয়ে যাওয়া তিনটি নদী মুক্তেশ্বরী, শ্রীহরি ও টেকা নদীর মোহনা। এই মোহনার সবচেয়ে বড় ২১ ভেল্ট সুইচ গেটের দু’পাশে ১৮টি কপাট নদীর পলির নিচে পড়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভবদহে শ্রীহরি, টেকা ও মুক্তেশ্বরী এ তিনটি নদীতে পলি জমে নাব্যতা হারিয়েছে। জোয়ারের সময় ১-২ ফুট পানি হলেও ভাটির সময় নদীগুলো শুকিয়ে যায়। এদিকে ৯ ও ২ ভেন্টের গেট দুটি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।

এলাকাবাসীরা জানান, পলি জমে নদীর নব্যতা হারানোর ফলে প্রতিবছর ব্যাপক এলাকা পানি বন্দী সৃষ্টি হয়। অপরদিকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নদী খনন করে যে সামান্য নাব্যতা ফিরে পায় তা ম্লান হচ্ছে অপরিকল্পিত মৎস্য খামারের কারনে। শ্রীহরি নদীর উজানে ও ভাটিতে একাধিক স্থানে নদীর জমি দখল করে স্থাপনা ও মৎস্য খামার গড়ে ওঠেছে। এক বিল থেকে অন্য বিলে পানি নিস্কাশনের যে সমস্থ খাল রয়েছে তার অধিকাংশ দখল করে মাছের খামর গড়ে উঠেছে। উঁচু বিল থেকে নিচু বিলে পানি প্রবহের যে সব দাড়া রয়েছে তা দখল হয়ে গেছে।

জানা গেছে, জয়েন্ট পাকিস্থন আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ভবদহ সুইসগেট। ১৯৫৮ সালে পাকিস্থানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইযুব খানের শাসনামলে সবুজবিপ্লব বাস্তবায়নের জন্য যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর ও সদর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় এক লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষার জন্য ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনে ভবদহ সুইসগেট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নেহালপুর ইউনিয়নসংলগ্ন টেকা-মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর ভবদহ নামক স্থানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবদহ সুইসগেট নির্মাণ করে (১৯৬২-৬৩)। তখন এলাকায় ব্যাপক ফসল হতে থাকে। ১৯৮২ সালে প্রথম সুইসগ গেটে জোয়ারের পানি বাধাগ্রস্থ হওয়ায় নদীর তলদেশে পলিমাটি জমতে থাকে। তখন থেকে শুরু হয় ব্যাপক ফসলহানি। রাস্থাঘাট ও স্কুল-কলেজে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে।

জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে এলাকার মানুষ ১৯৯৭ সালে নদীর বেড়িবাঁধ কেটে জোয়ারের পানি পাশের ভায়না বিলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সরকার ভবদহে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভবদহে জলাবদ্ধতা হয়নি। কিন্তু পরের তিন বছর আবার জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ২০০৭ সালে বিল খুকসিয়ায় সরকার ফের টিআরএম চালু করে। এর পরের কয়েক বছর আবার জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পায় ভবদহবাসী। সর্বশেষ গত তিন বছর ভবদহ অঞ্চলে আবার জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বর্তমানে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকার কোনো বিলে টিআরএম কার্যকর নেই।

ফলে বর্ষা মৌসুমে ভবদহে শত শত গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন নষ্ট হয়ে যায়। পানিবন্দি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে ভবদহ অঞ্চলের সার্বিক জীবনব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবসহ অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভবদহ অঞ্চলের মানুষের আন্দোলনের ফলে ১৯৯৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় যশোর-খুলনা পানি নিষ্কাশন প্রকল্প (কেজিডিআরপি) গ্রহণ করা হয়। ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৫৭ কোটি টাকা। সমুদয় অর্থ ব্যয় হওয়ার পরও জলাবদ্ধতার নিরসন হয়নি। অভিযোগ আছে, ওই অর্থের বড় অংশই লুটপাট হয়। পর্যায়ক্রমে ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাদ্দ করে ২৯ কোটি টাকা, ২০০৭ সালে ৫৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং ২০১০ সালে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। দফায় দফায় টিআরএমসহ ছোট ছোট প্রজেক্টে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। চার-পাঁচ বছর আগে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ করার পর থেকে ভবদহ এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ সামান্য আশার আলো দেখতে পেলেও কোনো সমাধান হয়নি। সর্বশেষ ভবদহ গেটের উত্তর পাশে শ্রীনদী ড্রেজিংয়ে চলতি বছর এক কোটি সাত লাখ টাকার কাজ চলছে। তবে দায়সারাভাবে কাজ করার ফলে তা কোনো কাজেই আসছে না।

ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতা ও পানি বিশেষজ্ঞ কমরেড গাজী হামিদ জানান, ভবদহ সুইজগেটের কার্যকারিতা হারিয়ে গেছে। এই গেটের কারণে নদনদী ও খালবিলের পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এ কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভবদহ সুইচগেট সম্পূর্ণভাবে তুলে দিয়ে ভবদহের আশপাশের সব নদী খনন করে উজানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং বিল কপালিয়াসহ খালবিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু করলে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, দীর্ঘ আন্দোলনের পর টিআরএম প্রকল্প অনুমোদিত হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই অঞ্চলকে জলাশয় দেখিয়ে টিআরএম বাতিল করে দেয়। ভবদাহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে আসছে বর্ষায় যশোর সদরের কিছু অংশসহ পুরো ভবদহ অঞ্চল তলিয়ে যাবে আর ভবদহ সমস্যা জিইয়ে রেখে সরকারি অর্থ লোপাট করা হচ্ছে। তাই বস্তবসম্মত কার্যকর প্রজেক্ট গ্রহণ এবং একইসঙ্গে লুটপাটের তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

একই বিভাগের সকল খবর