নিজস্ব প্রতিবেদক, পাইকগাছা (খুলনা)::
খুলনার পাইকগাছায় অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে এক ছোট ভাই তারই বড় বোনের কাছ থেকে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর দিন-রাত তার পায়ে লোহার শিকল দিয়ে নিজ বাড়িতে বেঁধে রেখে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
অভিযোগে জানানো হয়, বড় বোন রাবেয়া বেগম (৭২) এর কাছ থেকে তারই আপন ভাই কওসার আলী গাজী প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মূল্যেও ৩ শতক জমি লিখে নিয়েছেন। এরপর তাকে বাড়ির বাইরে যেতে না দিতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তাকে পাগল বলে সাব্যস্ত করে নিজ বাড়ির ঘরের কোনে লোহার লম্বা শিকল পরিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, বোনকে তিন বেলা ঠিকমত খাবার না দিয়ে বর্বরোচিত শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করছেন।
খবর পেয়ে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সরল গ্রামের মৃত ছবেদ আলী গাজীর মেয়ে রাবেয়া বেগম (৭২) কে দেখতে এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর লোমহর্ষক কাহীনি।
এসময় ঘটনার শিকার রাবেয়া বেগমকে তার বেঁধে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সুষ্ঠু-সাবলিলভাবে তিনি বলেন, তারা তাকে কোথাও যেতে দিতে চাননা, কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলতে দিতে চাননা। হয়তো সে কারণেই বেঁধে রাখা তাকে!
রাবেয়ার আরেক ছোট ভাই মোক্তার গাজী ঘটনার বর্ণনাসহ বড় বোনের বন্দিদশা থেকে মুক্তি চেয়ে বলেন, তারা মোট ৫ ভাই-বোন। তার এ বোনের নামে মোট ১৪ শতক জমি ছিল। যার থেকে প্রায় বছর ত্রিশেক আগে ৯ শতক জমি তাকে ও তার আরেক ছোট ভাইয়ের কাছে বিক্রি করেছিলেন। এরপর ২০১৫ সালে স্থানীয় সরল বাজারের দোকানসহ ৩ শতক জমি ছোট ভাই লিখে নেন। বাকি ২ শতক জমি রাবেয়া কাউকে লিখে দিতে চাননা। তিনি চান তার অবশিষ্ঠ জমি মসজিদ-মাদ্রাসায় দেবেন। সর্বশেষ বোনের বন্দিদশার খবর তিনিও জানতেননা। তবে বোনের এমন অবস্থা থেকে মুক্ত করতে চান তিনিও। যদিও তার সাথে অন্যান্য ভাইদের কথা হয়না বলে দাবি করে তিনিসহ স্থানীয়রা রাবেয়া বেগমের মুক্তিতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন।
ঘটনার অন্যতম নায়ক রাবেয়ার ভাই কওসার আলী গাজী দাবি করেন, তার বোন মানসিক রোগী। জমি লিখে নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু তিনি একা নন, অন্য ভাইয়েরাও নিয়েছে। তবে তার দায়িত্ব কেউ নিতে চায়না। শিকলমুক্ত করলে বোন এদিক-ওদিক চলে যান। খুঁজে পেতে তাকে অনেক কষ্ঠ সহ্য করতে হয়। সেকারণে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে দাবি তার।
এ বিষয়ে কোঁজ-খবর নিতে প্রতিবেশীদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, স্থানীয় সরল বাজারে বোনের নামে এখনো ২টি দোকান রয়েছে। যা লিখে নিতেই বোনকে নির্যাতনের এমন গদ্যলেখা।