1. sheikhnadir81@gmail.com : admin :
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
চার মাসের প্রচেষ্টায় কোরআন শরীফ হাতে লিখলেন মসজিদের খাদেম সেলিম ডুমুরিয়ায় বিয়ে বাড়িতে শিশু ধর্ষণ, ডেকোরেটর কর্মী গ্রেপ্তার ইউএনও’র আদেশ অমান্য করে ডুমুরিয়ার ঘেংরাইল নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণকাজ ফের শুরু ১২ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ বাইক চেপে টিকটক, দুর্ঘটনায় পাইকগাছায় তিন কিশোর আহত কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনে আনারুল সভাপতি দিপংকর সম্পাদক নির্বাচিত পাইকগাছায় উচ্চ ফলনশীল পাট বীজ উৎপাদন, চাষ ও পচনের আধুনিক পদ্ধতির ক্রমোন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা প্রচন্ড দাবদাহে পাইকগাছায় সড়কে ছিটানো হচ্ছে পানি, তৃষ্ণা নিবারণে শরবত পাইকগাছায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ২০ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল কেশবপুর বাস-মিনিবাস ও ট্রাক মালিক সমিতির ৫ বছর মেয়াদী কমিটি গঠন

সুন্দরবনের দুবলারচরে ঐতিহ্যবাহী ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ ৬-৮ নভেম্বর

  • প্রকাশিত : রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২২
  • ২৮ বার পঠিত

শেখ নাদীর শাহ্::

সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে রাস পূর্ণিমায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’। আগামী ৬ থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এ স্নানোৎসবে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বী তীর্থযাত্রীদের পাশাপাশি হাজার হাজার দর্শনার্থীরা উপস্থিত হবেন।

পুণ্যস্নানোৎসবে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সব পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ সকল তথ্য জানিয়েছেন।

মেলায় চন্দ্রিমার আলোকমালায় শোভিত নীরব চরাঞ্চল সরব হয়ে উঠবে পুণ্যার্থীদের প্রার্থনা-আরাধনা ও দর্শনার্থীদের ভীঁড়ে।

রাসমেলার ইতিহাস থেকে জানাযায়, বাঙালি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান পার্বণ দুবলারচরের রাস উৎসব। বাংলাদেশের মুণীপুরি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিষ্ণুপ্রিয়া গোষ্ঠীর সাগর-প্রকৃতির অভাবনীয় সৌন্দর্যের মধ্যে স্নান আরাধনায় পুণ্য অর্জন আর দর্শনার্থীদের আনন্দ-সঞ্চার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বছরের কার্ত্তিক-অগ্রহায়ণের শুক্লপক্ষের ভরা পূর্ণিমায় উছলে ওঠে সাগর। লোনা পানিতে ধবল চন্দ্রালোক ছলকে যায় অপার্থিব সৌন্দর্য রচনা করে। আর তখনই চন্দ্রিমার সেই আলোকমালায় সাগর-দুহিতা দুবলার চরের আলোর কোল মেতে ওঠে রাস উৎসবে। প্রতি বছর ৩-৫দিন যাবৎ বসে এই মেলা।

পর্বনপ্রিয় বাঙালির জন্য সুন্দরবনের রাশমেলা অন্যতম। মেলায় শুধু বাঙালি সনাতনীরা নয়, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশীদের পাশাপাশি স্নানোৎসব প্রতিবছর আেেলারকোলে জড়ো হয় দেশী-বিদেশী হাজার হাজার দর্শনার্থী পর্যটক।

পুণ্যার্থীরা সেখানে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেন। তারা সাগরকে সামনে নিয়ে নির্জনে কৃষ্ণপূজার সঙ্গে দেবতা নীল কমল আর গঙ্গাদেবীর আরাধনায় নিমগ্ন হন। পাপমোচন করেন সমুদ্রস্নানে। সূর্যোদয়ে পানিতে ভাসিয়ে দেন ফল ফুল। অত:পর ঢাক-ঢোলক-কাসা-মন্দিরা বাজিয়ে ভজন-কীর্তনে নিনাদিত করেন চারপাশ। পূজা-অর্চনার ফাঁকে সূর্যাস্তের পর সাগরকে সাক্ষী করে আকাশের বুকে উড়িয়ে দেয়া হয় ফানুস। এভাবেই কেটে যায় উৎসব। এরপর পরের বছর শুরু হয় আবারো।

দুবলারচরের আয়তন ৮১ বর্গ কিলোমিটার। আলোরকোল, কোকিলমনি, মাঝিরকিল্লা, কবরখালি, হলদিখালী, অফিসকিল্লা, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আমবারিয়া, মেহের আলির চর এবং শেলার চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত। সুন্দরবনের দক্ষিণে কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে বিচ্ছিন্ন চর দুবলার আলোরকোলের এই রাস উৎসব ধারণ করছে বহু বছরের ইতিহাস। দুবলার চরের রাস মেলার ইতিহাস নিয়ে নানান মত প্রচলিত আছে।

ধারণা করা হয়, ১৯২৩ সালে হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু এই মেলার প্রচলন করেছিলেন। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফলমূল খেয়ে অলৌকিক জীবনযাপন করতেন। নিকটবর্তী গ্রাম গুলোতে তার অনেক শিষ্য ছিল । অন্য একটি মতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগের কোনও এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন এবং পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে শুরু হয় রাস মেলা।
আবার কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলার চরে পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব। হরি ভজনের বিভিন্ন কার্যক্রম গুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো রাশমেলা ।

হরি ভজন মূলত ঠাকুর হরি চাঁদের শিষ্য ছিলেন । গুরুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই ভক্তরা মূলত জেলেরা প্রতিবছর ৫ দিন ব্যাপী এই রাসমেলার আয়োজন করে থাকেন । লেখক আব্দুল জলিলের সুন্দরবনের ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দি গ্রামের জনৈক হরিচাঁদ ঠাকুর স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পূজা পার্বণাদি ও অনুষ্ঠান শুরু করেন দুবলার চরে গিয়ে। তারপর থেকে মেলা বসছে।
মেলার মূল প্রার্থনা শুরু হয় ভোরের প্রথম জোয়ারে পুণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে। এইদিন সূর্য ওঠার আগেই সমুদ্রের বেলাভূমিতে প্রার্থণায় বসেন পুণ্যার্থীরা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রেও জোয়ার শুরু হয়। জোয়ারের পানি পুণ্যার্থীদের ছুঁলেই স্নানে নামেন তারা। দীর্ঘ বিরতির পর সুন্দরবনে মাছ ধরার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় রাস মেলার এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। তাই জেলেরা এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে থাকে। কারন মাছ ধরেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয় । দুবলার চরে কয়েক হাজার জেলের বসবাস। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এসব জেলেরা এখানে সাধারণত শুঁটকি তৈরি করেন। এ জায়গায় তাই দেখা যাবে জেলেদের বৈচিত্রময় জীবনধারা। এছাড়া জেলেদের মাছ ধরার নানান দৃশ্য আর কলাকৌশলও দেখা যাবে দুবলার চরে।

প্রতিবারের ন্যায় এবারো সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগ তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য পাঁচটি পথের অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদিত পথগুলি হলো:

১. বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর। ২. কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়–য়া শিবসা, অতঃপর শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর। ৩. নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ৪. ঢাংমারী অথবা চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ হয়ে দুবলার চর। ৫. বগী-বলেশ্বর-সুপতি-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর।

এবারের মেলায় ৬ থেকে ৮ নভেম্বর এ তিন দিনের জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বী দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের অনুমতি প্রদান করা হবে।
কোভিড-১৯ এর কারণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং মাস্কবিহীন কোন তীর্থযাত্রী/পুণ্যার্থী পুণ্যস্নানস্থলে গমন করতে পরবে না। প্রবেশের সময় প্রতিটি এন্ট্রি পয়েন্টে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশ ফি, অবস্থান ফি, লোকের সংখ্যা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব আদায়পূর্বক পাশ প্রদান করা হবে এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিসহ তীর্থযাত্রীদের আবেদন করতে হবে।

প্রতিটি অনুমতিপত্রে সিল মেরে পথ/রুট উল্লেখ করা হবে ও যাত্রীরা নির্ধারিত রুটগুলোর মধ্যে পছন্দমতো একটি মাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন, ৬ নভেম্বর দিনের ভাটায় যাত্রা শুরু করতে হবে এবং নৌযানগুলো কেবল দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বনবিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে বিএলসি অথবা সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে।
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস্থানকালীন সবসময় টোকেন ও টিকেট নিজের সঙ্গে রাখতে হবে। প্রতিটি লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলারকে আলোরকোলে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমে রির্পোট করতে হবে। রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নানের সময় কোন বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারো কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটা কুড়াল, করাত ইত্যাদি অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্রলারে কোন প্লাস্টিকের খাবারের প্লেট বহন করা যাবে না। লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যস্নান স্থালে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ফোটানোসহ কোন প্রকার শব্দ দূষণ করা যাবে না। রাস পূর্ণিমায় আগত পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট হতে প্রাপ্ত নাগরিকত্বের সনদপত্রের মূলকপি সঙ্গে রাখতে হবে বলে জানানো হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

একই বিভাগের সকল খবর