1. sheikhnadir81@gmail.com : admin :
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
পাইকগাছায় ভ্রাম্যমান আদালতে কেমিক্যাল মিশিয়ে অপরিপক্ক আম পাকানোর অভিযোগে তিন ব্যবসায়ীকে জরিমান; ২৪ ক্যারেট আম বিনষ্ট প্রতিবন্ধী কিশোর আমিরুলের চিকিৎসায় সাহায্যের আবেদন পাইকগাছার হরিঢালীতে স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ীর নির্মম নির্যাতনে পুত্রবধূর মৃত্যু! মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঠিক আগেই ছেলের খুনিকে ক্ষমা করলেন বাবা কয়রায় খান সাহেব কোমর উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানীর প্রতিবাদে সমাবেশ নলছিটিতে সর্বজনীন পেনশন স্কীম অবহিতকরণ সম্পর্কিত র‍্যালী ও আলোচনা সভা অপারেশনের নামে নিজেই রোগীদের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মিল্টন সমাদ্দার মুন্সীগঞ্জে টঙ্গীবাড়িতে অজ্ঞাত কিশোরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক দক্ষ ও যুগোপযোগী করে তোলা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী খুলনাসহ ৮ বিভাগে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি

তালায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিপ্রাপ্ত দু’সহোদর বীরেন্দ্রনাথ ও প্রতাপ কুমার সাহা বরখাস্ত

  • প্রকাশিত : শনিবার, ২২ জুলাই, ২০২৩
  • ২৪২ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক::

শেষ রক্ষা হলোনা সাতক্ষীরার তালায় ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকুরীপ্রাপ্ত দু’সহোদর বীরেন্দ্রনাথ সাহা ও প্রতাপ কুমার সাহার। গত ১৯ জুলাই ২৩’ সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী স্বাক্ষরিত পত্র যার স্মারক নং ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.০৪.০০৪.২০-১২৩৩ মাধ্যমে তাদেরকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র দাখিল করে নিয়োগ পাওয়ার বিয়য়টি প্রমাণিত ও ২য় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে অভিযুক্তরা স্বীকার করেন যে, নিয়োগলাভের বহুকাল পরে গত ২৪/১০/২২ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি তালা শাখা তাদের পিতার নাম সম্বলিত তালিকা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠিয়েছে। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা দাবীদার ললিত মোহন সাহার নামে দাখিলকৃত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের সাময়িক সনদ যার নং ১৪৮৬০, তাং ১৯/৪/২০০৩ সঠিক নয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মতামত থেকে প্রমাণিত হয় যে, অভিযুক্তরা অসত্য তথ্য প্রদান ও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করে নিয়োগ লাভ করেন।

এর আগে গত ৬ জুন ২৩’ সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী স্বাক্ষরিত পত্রে যার স্মারক নং- ৩৮.০১.৮৭০০.০০০.০৪.০০৪.২০-৯৬০ ও ৬১ মাধ্যমে অভিযুক্ত তালার আসাননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রতাপ কুমার সাহা ও একই উপজেলার সরুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথ সাহাকে কারণ দর্শানো নোটিশে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী এর ৪ (৩)(ঘ) মোতাবেক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন কার্যকর হবেনা তার কারণ দর্শাতে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২য় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্তরা তাদের নিয়োগের বহুকাল পর ২৪/১০/২০২৩ তারিখে তালা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি তাদের পিতা ললিত মোহন সাহার নাম সম্বলিত তালিকা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠিয়েছে যা, জামুকার চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

এছাড়া ঐ পত্রে উল্লেখ থাকে যে, বিভাগীয় মামলায় গত ২৭/১০/২০২২ তারিখের শুনানীতে অভিযুক্তরা তার পিতা ললিত মোহন সাহার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদর্শনে ব্যর্থ হন এবং সন্তোষজনক জবাব প্রদান করেননি।

প্রসঙ্গত, তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত বসন্ত সাহার ছেলে মৃত লোলিত মোহন সাহা জীবদ্দশায় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে একাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রস্তুত করেন। যার একটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাময়িক সনদপত্র, যার স্মারক নং-মুবিম/সা/খুলনা/প্র-৩/৪৫/২০০২/৩৯০, তারিখ-১৯-০৪-২০০৩। যার সার্টিফিকেট নং-১৪৮৬০।

এর অন্তত ৬ বছর পর ২০০৯ সালের ১৫ মে’ যুদ্ধকালীণ খুলানা বিভাগের লে: অবসরপ্রাপ্ত গাজী রহমতুল্লাহ দাদুর কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে মৃত্যুবরণ করেন ললিত মোহন সাহা। এরপর তার মৃত্যুর ৫ বছর পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে আতাউল গনী ওসমানী স্বাক্ষরিত দেশরক্ষা বিভাগের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র। একই বছরের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তালা উপজেলা সংসদের কমান্ডার মফিজ উদ্দিনের নিকট থেকে তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যায়ন পত্র, দু’দিন পর ৬ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কমান্ডার মোশারফ হোসেন (মশু), একই বছরের ১৫ জুলাই ধানদিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও দক্ষিণ শারসা গ্রামের মৃত ফকির আহাম্মেদ গাজীর ছেলে মো: তবিবর রহমানের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যায়নপত্র গ্রহণ করেন।

প্রত্যায়নকারীদের মধ্যে মো: তবিবর রহমান প্রত্যায়ন দেওয়ার পর জানতে পারেন যে, ভূয়া তথ্য দিয়ে ললিত মোহ সাহার ছেলেরা তাকে বিভিন্ন জাল, তঞ্চকী সনদসহ ভূয়া প্রত্যানপত্র দেখিয়ে তার কাছ থেকে প্রত্যায়নটি নিয়েছে।

মূলত এসব সনদে তার দু’ ছেলে যথাক্রমে বীরেন্দ্র নাথ সাহা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ০৫/০২/ ২০০৮ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নং প্রাশিঅ/নিয়োগ/স:শি:নি/০১/২০০৮/২৯ মোতাবেক পিতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল ও ২৬/০৪/২০০৯ তারিখে নিয়োগ লাভ করেন। এবং প্রতাপ কুমার সাহা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৪/০৫/২০০৯ তারিখের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নং প্রাশিঅ/নিয়োগ/০৪/স:শি:নি/০৯/৬৮৪ মোতাবেক উক্ত সনদ দাখিলপূর্বক ২৬/০৯/২০১০ তারিখে নিয়োগ লাভ করেন।

সামগ্রিক বিষয়াবলী জানতে পেরে তবিবুর রহমান ললিতের মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ও তার দেওয়া প্রত্যায়নপত্রটি নিয়ে সাতক্ষীরা আমলী আদালতে প্রতাপ কুমার সাহা ও তার ভাই বীরেন্দ্র নাথ সাহার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। যার নং সিআর-১৯৬/২০(পাট), ধারা: ৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/৪১৭ ও ১১৪ দঃবিঃ।

আদালত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই সাতক্ষীরাকে নির্দেশ প্রদান করেন। সাতক্ষীরার এসআই সৈয়দ রবিউল আলম পলাশ দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর গত ২০/৪/২১ তারিখে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেখানে ১নং বিবাদী প্রতাপ কুমার সাহা ও ২ নং বিবাদী বীরেন্দ্র নাথ সাহা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় দাখিলকৃত তাদের পিতা ললিত মোহন সাহার নামে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্মারক নং-মুবিস/সা/খুলনা/প্র-৩/৪৫/২০০২/৩৯০, তারিখ-১৯/০৪/২০০৩ মূলে ১৪৮৬০ নং ক্রমিকের সাময়িক সনদপত্রটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় হতে যাচাই করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপ সাচব (সনদ) ডা: দুলাল কৃষ্ণ রায় স্বাক্ষরিত স্মারক নং ৪৮.০০.০০০০.০০৩.৫০.০৩০.১৮.৬১ তারিখ-২৩/০২/২০২১ এর মাধ্যমে জানানো হয় সাময়িক সনদপত্রটি সঠিক নয়। এছাড়া তারা জাল সনদকে আসল সনদ হিসেবে ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে অদ্যবধি সরকারি তহবিলের অর্থ গ্রহণ করায় তাদের বিরুদ্ধে দি পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/৪২০ ধারার অপরাধ পাওয়া যায় বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।

এদিকে আদালতের ১৯৬/২০ মামলায় নিজেদের নির্দোষ প্রমাণে আসামী প্রতাপ কুমার সাহা ও তার ভাই বীরেন্দ্র নাথ সাহা গত ১৩/৪/২০২১ তারিখে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ নোটারী পাবলিকের কার্যালয় থেকে এফিডেভিটের মাধ্যমে একটি অঙ্গীকার নামা প্রস্তুত করেন। যেখানে তারা বাদীর কাছ থেকে নেয়া প্রত্যায়নপত্র বাদীর অনুকূলে ফেরৎ প্রদানপূর্বক উল্লেখ করেন যে, ইতোপূর্বে তারা কোথাও প্রত্যায়নটি ব্যাবহার করেননি এমনকি ভবিষ্যতেও করবেন না। এছাড়া ঐ অঙ্গীকার নামায় তারা আরো উল্লেখ করেন যে, ওই প্রত্যায়ন ব্যাতীত মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র, সনদ তারা গ্রহন করেননি।

এর আগে পিতা ললিত মোহন সাহার মৃত্যুর ৩ বছর পর তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত করতে তার বড় ছেলে জোগেশ চন্দ্র সাহা গত ২৮/১০/২০১৩ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে অনলাইনে আবেদন করেন। যার প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বিষয়টি গত ১/১০/২০১৫ তারিখে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিকে প্রেরণ করেন।

এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুর রহমান গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি মৃত ললিত মোহন সাহাকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই তালিকা থেকে বাদ দিতে ও তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না করতে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি তালাসহ বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক পৃথক আবেদন করেন।

দাদু ললিত মোহনকে মুক্তিযোদ্ধা দেখিয়ে ভুয়া সনদে বাবা-কাকাদের বিভিন্ন সরকারি চাকরি গ্রহনের জারী-জুরি ফাঁস হওয়ায় সর্বশেষ যাচাই-বাছাই কার্যক্রমকে প্রভাবিত ও এরআগে উত্থাপিত জাল সনদপত্রের সাথে সঙ্গতি রেখে চুড়ান্ত সনদপত্র সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন মহলে ব্যাপক দৌড়-ঝাঁপ শুরু করে ললিতের পৌত্র সুমন সাহাসহ তার স্বজনরা ও অনুসারীরা।
এমনকি কথিত মুক্তিযোদ্ধা ললিতের তঞ্চকতাপূর্ণ সার্টিফিকেট’র তথ্য ফাঁস হওয়ায় অনলাইন আবেদন ঠিক রেখে নতুন করে সার্টিফিকেট প্রস্তুত করতে পরিবারের পক্ষে বিভিন্ন মহলে ঝাঁপের পর সর্বশেষ যাচাই-বাছাই তালিকায় নাম সম্পৃক্ত করতে উঠে-পড়ে লাগে। সর্বশেষ কমিটির একটি পক্ষকে ম্যানেজ করে দ্বিধা বিভক্ত তালিকায় নাম সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।

মূলত সর্বশেষ যাচাই-বাছাই তালিকায় দ্বিধা-বিভক্ত তালিকায় কেবল নাম সম্পৃক্ত হলেও ২০০৮-০৯ সালে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তার ছেলেদের প্রদর্শিত সাময়িক সনদপত্রটির উৎস্য আসলে কি? এমন নানা প্রশ্ন এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে জনপদেরর সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদ্ধের কাছে। এব্যাপারে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদেরকেও আইনের আওতায় নেওয়ার দাবি জানান।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক দৌড়-ঝাঁপের পর সর্বশেষ তাদের বরখাস্তের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে। এমনকি সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছে তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

একই বিভাগের সকল খবর