1. sheikhnadir81@gmail.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
আশাশুনিতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রাজ’র মনোনয়ন সংগ্রহের অর্থ জমা মুন্সীগঞ্জে মাই টিভি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত টাঙ্গাইলের ভুঞাপু‌রে ঘুমন্ত স্বামীর পুরুষাঙ্গ কাটলেন স্ত্রী কয়রার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন গল্পবোনার ১৩ বছর সৈয়দপুরে সময় টিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত উপজেলা নির্বাচন: শার্শার প্রার্থীরা তাকিয়ে আছেন দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে মুন্সীগঞ্জে রিপোর্টস ক্লাবের কমিটি গঠন: আহবায়ক মোঃ জাফর, সাকিব সদস্য সচিব ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহত ১২ জন রাজশাহীর বাগমারায় অগ্নিকান্ডে ১৫টি দোকান ঘর ভষ্মিভূত মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

আমা ইটের খোঁয়া, জলাশয়ের বালু ও কার্পেটিংয়ে বিটুমিনে চরম কারচুপির মধ্যে পাইকগাছার কপিলমুনিতে শেষ হলো দেড় কোটি টাকার রাস্তা নির্মাণ কাজ!

  • প্রকাশিত : রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩
  • ১৯৫ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক::

আমা ইটের খোঁয়া, জলাশয়ের বালু আর সর্বশেষ ড্রেজ কার্পেটিংয়ে বিটুমিনে চরম কারচুপির মধ্যে সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রকৌশলী অফিসের কতিপয় কর্তা-ব্যাক্তিদের পরষ্পর যোগসাজশে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করতে সেখানকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করায় বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয় স্কুলটির ছাত্র-ছাত্রীদের। ঠিকাদার রুহুল কুদ্দুস খানের প্রভাব ও এলজিইডি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের চাকুরী জীবনের শেষ সময়ের বেষাতিতে আটকা পড়েছে উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগর-রামনগর মানুষের ভাগ্য।

গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (আই আর আই ডিপি-৩) এর আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগর-রামনগরে প্রায় ৩ হাজার মিটার রাস্তা নির্মাণ কাজে শুরু থেকেই ব্যাপক দূর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠে। বেড কাটিংয়ে বালুভরাট (ইমপ্রুভ সাবগ্রেড) থেকে শুরু করে এএসএম, ডব্লিউবিএম সাববেইজে মহা দূর্নীতির পর সর্বশেষ ড্রেজ কার্পেটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হট প্লেন মেশিনে প্রতিবার প্রায় ৭ সেফটি পাথরের বিপরীতে সাড়ে ২২ লিটার বিটুমিনের স্থলে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ ৮/১০ লিটার পর্যন্ত। বিষয়টি শুরু থেকে এলজিইডির স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করেও কার্যত কোন কাজই হয়নি। তিনি খখনো বিষয়টি দেখছেন, কখনো নিয়ম অনুযায়ী কাজ হচ্ছে, বিষয়টি সাব:এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তদারকি করছেন আবার কখনো বলছেন পরীক্ষায় কাজ ভাল না পেলে ঠিকাদার বিল পাবেননা বলে জানাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, উপজেলা প্রকৌশলী রাস্তাটির কাজ শুরু থেকে নিজেই তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, সংলিষ্টদের ম্যানেজ করে রাস্তাটির দায়সারা কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়েছে। সর্বশেষ কার্পেটিংয়ের কিছু কাজ বাকি থাকায় রবিবার প্রত্যুষে তড়িঘড়ি করে শেষ করে স্কুলে রাখা নির্মাণ সামগ্রী পাথর, বিটুমিনসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে চলে গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, এর আগে তারা কাজে বাঁধা দিয়ে প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হয়নি। অদৃশ্য ক্ষমতা বলে প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদার দূর্নীতি-অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করেছে।

দূর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঠিকাদারের সাফ জবাব, ২ বছর আগের প্রকল্পে বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য দ্বিগুণ বেড়েছে, কাজে তার অন্তত ২০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। এমন অবস্থায় সকলকে জানিয়েই তিনি কাজটি করছেন। কিছু জানার থাকলে উপজেলা প্রকৌশলীসহ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনে নিন। এমনকি ওসব পত্রিকায় লিখে কোন লাভ নেই বলেও দম্ভোক্তি করেন ঠিকাদার রুহুল কুদ্দুস খান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২২’র জানুয়ারীতে কাজ শুরু হয়ে গত প্রায় দেড় বছরে নানা অজুহাতে শম্ভুক গতিতে কাজ করেছেন ঠিকাদার। গত ১৩ জানুয়ারী ২২’ স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু রাস্তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রথমে ভিন্ন সড়কে বেডকাটিংয়ের পর স্থানীয় বিভিন্ন খানা-খন্দক ও পুকুর থেকে মাটি মিশ্রিত বালু উত্তোলন করে বেড ভর্তি করেন। ঘটনায় ঐসময় দু’ বালু উত্তোলন শ্রমিককে প্রশাসন আটক করলেও সর্বশেষ তারা ছাড়া পাওয়ার পর পুনরায় জলাশয়ের বালুতে বেড ভর্তি করেন তারা। যদিও সরাসরি ভূগর্ভস্থ বালুভরাটের পর রোলার দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এরপর হেজিংয়ে ৬ ইঞ্চি থিকনেসে ৩ইঞ্চি খোঁয়া ৩ ইঞ্চি বালু দেওয়ার কথা থাকলেও ৩৫ শতকরা খোঁয়া আর ৬৫ শতকরা বালু দিয়ে ৫/সাড়ে ৫ ইঞ্চি কাজ করেন।

এছাড়া খোঁয়া তৈরি করতে বাইরে থেকে দিন ও রাতের আঁধারে ট্রাকভর্তি করে নি¤œমানের আদলা আমা ইট এনে এএস ও ডব্লিউবিএম-এর কাজ করেন ঠিকাদার। বিষয়টি ঐসময় উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত ও মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এর আগে প্রকল্পে মূল রাস্তার বাইরে থেকে শুরু হওয়া সামগ্রিক কাজটি প্রথমত স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশলীর পরোক্ষ ও সর্বশেষ প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় দায়সারাভাবে শেষ করা হয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

এমন পরিস্থিতিতে এরআগে এলাকাবাসী দফায় দফায় কাজ বন্ধ করে দিলেও কর্তৃপক্ষের বিশেষ তদারকি না থাকায় সর্বশেষ স্থানীয় কতিপয় ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করে অবাধে বুক ফুলিয়ে কাজ করেন তিনি।

জানাগেছে, গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (আই আর আই ডিপি-৩) এর আওতায় প্রকল্পে উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগর আমজাদের দোকান বিসি সড়ক-রামনগর ভায়া ইয়াকুব এবং রাধা সাধুর বাড়ির সড়কের ১০০-৩০০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সড়কটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক অদৃশ্য ইশারায় সড়কের অন্তত ৩টি সংযোগ রাস্তার কাশিমনগর এলাকাকে বাইরে রেখে রামনগরের প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে রামনগর গ্রামটি ঘুরে স্থানীয় মানিকতলা বাজার পর্যন্ত বাস্তবায়ন করে।

স্থানীয়রা জানান, সড়কটি নির্মাাণে শুরুতে বেডকাটিংয়ের পর স্থানীয় বিভিন্ন জলাশয় থেকে অবৈধ উপায়ে মাটি মিশ্রিত বালু উত্তোলন করে ইমপ্রুভ সাবগ্রেডের কাজ করে। এরপর এএস’র কাজ করতে অত্যন্ত নিন্মমানের ইট ও ট্রেকার-ট্রাকযোগে বাইরে থেকে রাত-দিন ভাটার গোটা (ইটের উচ্ছিষ্ট অংশ) এনে রাস্তায় ফেলে খোঁয়ার তুলনায় অতিরিক্ত বালু দিয়ে কাজ সারেন। এরপর বেশ কিছু দিন কাজ বন্ধ রেখে কয়েক মাস আগে ডব্লিউ বি এম’র কাজ করতে একইভাবে বাইরে থেকে ভাঙ্গা ও গোটা ইটের টুকরো এনে তা দিয়ে দায়সারা কাজ করে ফের কাজ বন্ধ রাখা হয়। ঐসময় প্রকৌশলীর বক্তব্য ছিল, ঠিকাদারকে ঠেলে ঠেলে কাজ করিয়ে নিতে হচ্ছে তাদের।

এনিয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে সর্বশেষ তিনি বলেন, সঠিক পথেই এগিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রকল্পকাজ। বিশেষ করে প্রকল্পে ১০০০ মিটার থেকে ৩০০০ মিটার পর্যন্ত কাজ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তার দাবি, আমজাদের দোকান হতে ভায়া ইয়াকুব ও রাধা সাধুর বাড়ি-বর্তমান শুরুর স্থল পর্যন্ত ১০০০ মিটার এলাকা বাদ রাখা হয়েছে প্রকল্পে। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রকল্পে আমজাদের দোকান হতে রামনগর পর্যন্ত ভায়া ইয়াকুব ও রাধাপদ সাধুর বাড়ি চলতি প্রকল্পের উৎস্য স্থলের আগে তিনটি লিংক রোডের মিলনস্থল। যা বাদ রেখে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে প্রকল্পে স্থানীয় খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) এর সংসদ সদস্য আলহাজ্জ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু গত ১৩ জানুয়ারী ২২’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যাতে প্রকল্প সড়কের দৈর্ঘ্য ১০০-৩০০০ মিটার লেখা থাকলেও প্রকৌশলী বলছেন, ১০০০-৩০০০ মিটার।

এব্যাপারে স্থানীয় সাবেক এক ইউপি সদস্য জানান, প্রকল্পে রেকর্ড দূর্নীতি-অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। বাইরে থেকে নিয়মিত আমা ইটের খোঁয়া এনে এএস ও ডব্লিউবিএম’র কাজ করা হয়েছে। এর আগে তারা এলাকাবাসীর পক্ষে নিন্মমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করায় তা বন্ধ করে দিলেও এক অদৃশ্য ইশারায় ঠিকাদার সেই নিন্মমানের উপকরণেই কাজ সারেন।

সর্বশেষ ধারণা করা হচ্ছে, উপজেলা প্রকৌশলীদের সাথে পরষ্পর যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রুহুল কুদ্দুস খান রাস্তায় প্রথম থেকেই নিন্মমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যাবহার করে দায়সারা নির্মাণকাজ সেরেছেন।

এদিকে ঠিকাদার রুহুল কুদ্দুস খান সড়কে কার্পেটিং এর কাজ করতে সাইডের প্রায় দেড় কি:মি: দূরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ৬৭নং রেজাকপুর-কাশিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রেখে সেখানে চুলা নির্মাণ করে বিটুমিন জ্বালিয়ে হট প্লেন মেশিন রেখে পাথর ও বিটুমিনের সংমিশ্রন করছেন। স্কুল চলাকালীণ বিটুমিন পোড়ানো ও হট মেশিনের কালো বিষাক্ত রাসায়নিক ধোঁয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় ক্লাস করতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়।

এক পর্যায়ে গত ৩১ মে বেলা ১১ টা ২০ মিনিটে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা ও ১ জুন বেলা ১১ টায় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মির্জা মিজানুর রহমানের নির্দেশে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।

এব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অপর্ণা রায় জানান, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার যথাক্রমে টিও, এটিও স্যারের নির্দেশে বাধ্যতামূলক ছুটি দেন তিনি।

সার্বিক অবস্থার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কৃর্তপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

একই বিভাগের সকল খবর