1. sheikhnadir81@gmail.com : admin :
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
চার মাসের প্রচেষ্টায় কোরআন শরীফ হাতে লিখলেন মসজিদের খাদেম সেলিম ডুমুরিয়ায় বিয়ে বাড়িতে শিশু ধর্ষণ, ডেকোরেটর কর্মী গ্রেপ্তার ইউএনও’র আদেশ অমান্য করে ডুমুরিয়ার ঘেংরাইল নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণকাজ ফের শুরু ১২ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ বাইক চেপে টিকটক, দুর্ঘটনায় পাইকগাছায় তিন কিশোর আহত কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনে আনারুল সভাপতি দিপংকর সম্পাদক নির্বাচিত পাইকগাছায় উচ্চ ফলনশীল পাট বীজ উৎপাদন, চাষ ও পচনের আধুনিক পদ্ধতির ক্রমোন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা প্রচন্ড দাবদাহে পাইকগাছায় সড়কে ছিটানো হচ্ছে পানি, তৃষ্ণা নিবারণে শরবত পাইকগাছায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ২০ জনের মনোনয়নপত্র দাখিল কেশবপুর বাস-মিনিবাস ও ট্রাক মালিক সমিতির ৫ বছর মেয়াদী কমিটি গঠন

সু-সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের ১৪২তম জন্মদিন আজ

  • প্রকাশিত : শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৯২ বার পঠিত
imdadul-huque3649

শেখ নাদীর শাহ্::


আজ ৪ নভেম্বর। বহুমুখী সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী আব্দুল্লাহ উপন্যাসের জনক কাজী ইমদাদুল হক এর ১৪২ তম জন্মদিন। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, কবি, প্রবন্ধকার, উপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্নে যে সকল বাঙ্গালী মুসলমান মননশীল গদ্য লেখকের আবির্ভাব হন কাজী ইমদাদুল হক তাদের অন্যতম। শিক্ষা-সাহিত্যসহ নানা ক্ষেত্রে অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া তৎকালীন মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় আলোকবর্তিকা তথা ব্যাতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী হিসেবে সাহিত্যাঙ্গনে আবির্ভূত হন কাজী ইমদাদুল হক।

কাজী ইমদাদুল হকের গ্রন্থ রচনা সমৃদ্ধ না হলেও একটি মাত্র অসমাপ্ত উপন্যাস ‘আব্দুল্লাহ’ তাকেঁ বাংলা সাহিত্যে অনন্য উচ্চতায় পৌছেছে। বিংশ শতাব্দীর গোঁড়ার দিকে বাঙালি মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় নিখুঁত নির্যাশ তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে আব্দুল্লাহ উপন্যাসে।

৪ নভেম্বর কাজী ইমদাদুল হকের ১৪২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জন্মস্থান সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছায় নানা কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে।

কাজী ইমদাদুল হক স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে শনিবার সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সাহিত্যিকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন, আলোচনা সভা, পদক ও পুরস্কার বিতরণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য মো: আক্তারুজ্জামান বাবু। বিশেষ অতিথি থাকবেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার ইকবাল মন্টু, পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর, থানা ওসি মোঃ রফিকুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়ানহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানে সমকালীন বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড.নজরুল ইসলাম এবং শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক অধ্যাপক সুরঞ্জন রায়কে কাজী ইমদাদুল হক স্মৃতি পদক প্রদান করা হবে বলে কাজী ইমদাদুল হক স্মৃতি পরিষদের পক্ষে জানানো হয়েছে।

সু-সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ কাজী ইমদাদুল হক ১৮৮২ সালে ৪ নভেম্বর খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা কাজী আতাউল হক। তিনি আসামের জরিপ বিভাগে চাকরি করতেন। পরে খুলনার ফৌজদারি আদালতের মোক্তার নিযুক্ত হন। কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান।

কাজী ইমদাদুল হকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পরিবার ও গ্রামের স্কুলে। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে ছিল তাঁর পিতার বন্ধুত্ব। আচার্য্য দেবের উৎসাহ ও পরামর্শে কাজী ইমদাদুল হকের পিতা তাকে ১৮৯০ সালে খুলনা জেলা স্কুলে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি করান। ১৮৯৬ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রার্স পাশ করেন। ১৮৯৮ সালে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি পদার্থ বিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ডিগ্রী ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষার আগে অসুস্থ্যতার কারণে অনার্স পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ (ইংরেজী) বিষয়ে ভর্তি হন।

১৯০০ সালে কাজী ইমদাদুল হক কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ সম্পন্ন করেন। ১৯১৪ সালে তিনি বিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯০৪ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কাজী ইমদাদুল হক। এর দুই বছর পর ১৯০৬ সালে আসামের শিলং বিভাগে শিক্ষাবিভাগের উচ্চমান সহকারী হিসেবে যোগ দেন। ১৯০৭ সালে তিনি ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯১১ সালে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভূগোলের অধ্যাপক এরপর ১৯১৪ সালে ঢাকা বিভাগে মুসলিম শিক্ষা সহকারী স্কুল পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন। ১৯১৭ সালে তাকে কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ১৯২১ সালে তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বোর্ডের সুপারিন্টেনডেন্ট নিযুক্ত হন। আমৃত্যু তিনি এ পদেই বহাল ছিলেন।

১৯০৪ সালে খুলনা শহরে মৌলভী আব্দুল মকসুদ সাহেবের জ্যেষ্ঠ কন্যা সামসন্নেসা খাতুনকে বিয়ে করেন। কাজী ইমদাদুল হকের চার পুত্র ও ২ কন্যা- কাজী আনারুল হক, কাজী সামছুল হক, কাজী আলাউল হক, কাজী নুরুল হক এবং কন্যা জেবুন্নেছা ও লতিফুন্নেছা।

কাজী ইমদাদুল হকের কতিপয় পাঠ্য পুস্তক ও রচনাগুলি হল কবিতা আঁখিজল ১৯৯০, আব্দুল্লাহ ১৯৩৩, প্রবন্ধ-মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা ১৯০৪, প্রবন্ধমালা প্রথম খ- ১৯১৮, প্রবন্ধমালা দ্বিতীয় খ- ১৯১৬ শিশু সাহিত্য নবী কাহিনী, কামারের কান্ড ১৯১৯, পাঠ্য পুস্তক ভূগোল শিক্ষা প্রনালী, প্রথম ও ২য় ভাগ ১৯১০, সরল সাহিত্য। এছাড়া তিনি শিক্ষক নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তিনি ছিলেন সুপরিচিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অন্যতম স্থপতি এবং সমিতির মুখপত্র বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

মুসলমান সমাজের কট্টর আর্দশ ও রীতিনীতির বিপরীতে স্বাধীনচেতা ও প্রগতিশীল মননের নব্যসমাজ প্রতিষ্ঠার বাসনাই তাঁর উপন্যাসে ঔপন্যাসিক প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করার প্রয়াস পেয়েছে। চুয়াল্লিশ বছরের কর্মচঞ্চল জীবনে ইমদাদুল হকের প্রধান কীর্তি আবদুল্লাহ্ উপন্যাস (১৯৩৩)। একটিমাত্র উপন্যাস লিখে ইমদাদুল হক বাংলা সাহিত্যে রেখে গেছেন তার স্বতন্ত্র প্রতিভার স্বাক্ষর।

শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য দক্ষতা, গভীর দায়িত্ববোধ ও উদ্ভাবনী শক্তির স্বীকৃতিস্বরূপ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাকে ১৯১৯ সালে খান সাহেব ও ১৯২৬ সালে তাকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন।

কাজী ইমদাদুল হক কখনো সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন না। সারা বছর কোন না কোন অসুখ লেগেই থাকতো। ১৯২৬ সালে তিনি ফের কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় চিকিৎসায় কোন প্রতিকার না হলে হেকিমী চিকিৎসার জন্য দিল্লির উদ্দেশ্যে কলকাতা গমন করেন। কলকাতায় অবস্থান করাকালীন ১৯২৬ সালের ২০মার্চ ৪৪ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। বরেণ্য সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান সাধক ও সমাজ সংষ্কারক কাজী ইমদাদুল হককে গোবরা কবরস্থানে তার মাতার কবরের পাশে দাফন করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

একই বিভাগের সকল খবর