নিজস্ব প্রতিবেদক ::

খুলনার পাইকগাছায় গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে ও চোখে মুখে আঠা লাগিয়ে গণধর্ষণ ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঘটনার মূল হোতা এনামুল জোয়াদ্দার (২৫) নামে এক যুবককে দেশীয় তৈরি শুটারগান, ১ রাউন্ড গুলি ও ৫০ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগরস্থ একটি পরিত্যক্ত মাছের ডিপো সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে উপজেলার গদাইপুর গ্রামের একরামুল জোয়াদ্দারের ছেলে।

এর আগে থানা পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার দক্ষিণ রাড়–লীর আবুল হোসেন সরদারের ছেলে ছামাদ সরদার (৪৪) নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আলোচিত ধর্ষণ ঘটনার মূল হোতা এনামুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার মায়ের কাছ থেকে একটি চোরাই মোবাইল ও পাশ্ববর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার মালতিয়া গ্রামের দীপক হালদারের ছেলে সুমন হালদার (৪০) নামে এক স্বর্ণকারের কাছ থেকে চোরাই স্বর্ণের কানের দুল উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে, পুলিশ ওই মামলায় রাড়ুলীর ছামাদ সরদার (৪৫) কে গ্রেপ্তার পূর্বক আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠিয়েছেন।

অন্যদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঘটনার শিকার গৃহবধূর অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হলেও বর্বরোচিত ঘটনায় এখনো আতংক কাটেনি। এমনকি লোকজনকে স্বাভাবিকভাবে চিনতেও পারছেননা।

থানায় দায়ের করা মামলায় জানানো হয়, ভিকটিমের স্বামী আব্দুল মান্নান গত ১১ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) বিকেলে উপজেলার দক্ষিন রাড়ুলী গ্রামের বাসিন্দা ও কাঁচামাল ব্যবসায়ী সোমবার উপজেলার গড়ইখালী হাটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলে ঐ দিন রাতে গৃহবধূ বাড়িতে একা থাকার সুযোগে ২/৩ জন দূর্বৃত্ত একতলা পাকা বাড়ির চিলে কোটার দরজা ভেঙ্গে ঐ গৃহবধূর ঘরে ঢোকে।

এসময় ওড়না দিয়ে তারা তার হাত-পা বেঁধে ফেলে। এসময় তারা তাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কানে থাকা স্বর্ণের দুল, ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা নগদ ১১ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত একটি আইটেল মোবাইল নিয়ে নেয়। এরপর তারা তার চোখে-মুখে আঠা জাতীয় পদার্থ দিয়ে আটকে দিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে অচেতন মূমুর্ষ অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরের দিন ভোরে গৃবধূর গোঙানির শব্দ পেয়ে প্রতিবেশি বৃষ্টি খাতুন এক মহিলা চিৎকার দিলে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে হাত-পা বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেন।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারী) সকালে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

সহকারী পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) মোঃ সাইফুল ইসলাম ও থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ওবাইদুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌছে ধর্ষিতার বিছানা থেকে রক্তমাখা বাঁলিশ, কাথা-কাপড়সহ ১টি শাবল আলামত হিসেবে উদ্ধারপূর্বক জব্দ করেন।

এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে লুটপাট ও ধর্ষণের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামী করে বাংলাদেশ দ:বি: ৩৯৪ পেনাল কোর্ড তৎসহ ২০০০ সালের নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী) ২০২০ এর ৯ (৩) ধারায় পাইকগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার নং-১৩।

এ ব্যাপারে ভিকটিমের স্বামী আব্দুল মান্নান সরদার মুঠোফোনে জানান, ভিকটিমের অবস্থা কিছুটা সুস্থ্য, এখন ফল জাতীয় খাবার খেতে পারছে। ঘটনায় তিনি দোষীদের গ্রেফতারপূর্বক উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলোচিত ধর্ষণ মামলার মূলহোতা এনামুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অন্য একটি চুরির মামলায় স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় আটক সুমনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় তাদের সাথে অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে তাকে বিষদ জিজ্ঞাবাদ জরুরী। তবে মামলার তদন্ত স্বার্থে আরো বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।