নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা::

সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের বিনেরপোতা এলাকায় অবৈধভাবে ট্রাক্টর, ট্রলি ও ডাম্পারে করে মাটি বহনে সড়কের উপর মাটি পড়ে বৃষ্টিতে ভিজে চলাচলে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়কের পিচের উপর পড়ে থাকা মাটিতে পানি পড়ে সৃষ্টি হয়েছে কাদা। আর এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। সর্বশেষ শুক্রবার (১৭ জুন) রাতে পিচ্ছিল সড়কের উপর পড়ে গিয়ে দুই মটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। সড়কে নিরাপত্তায় এব্যাপারে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের বিনেরপোতা এলাকায় বেতনা নদী খনন কাজ চলছে। নদী খননের অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া মাটি সদর উপজেলার কাশেমপুর বাইপাস সড়ক এলাকার বিল, বালিয়াডাঙ্গা বিল ও ইন্দিরা এলাকায় ইটভাটা মালিকসহ বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ, নিচু জমি, পুকুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বসতভিটা ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইটভাট ও জমির মালিকরা সল্পমূল্যে বেতনা নদী খননের মাটি কিনে তড়িঘড়ি করে অবৈধভাবে, ট্রলি, ডাম্পার ও ট্রাক্টরে অতিরিক্ত বোঝাই করে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার উপর ছিটকে পড়ছে মাটি। আর এতেই যত বিপত্তি। সড়কে পড়া মাটির উপর সামান্য বৃষ্টির পানি পড়লেই তৈরী হচ্ছে মরণ ফাঁদ।

চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে শুক্রবার (১৭ জুন) বিকালে হালকা বৃষ্টির পর সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের বিনেরপোতা বাইপাস সড়ক এলাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরপর শনিবার (১৮ জুন) দুপুরের টানা দ্বিতীয় দিনের বৃষ্টিতে অবস্থা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। মূলত বৃষ্টির পরই সড়কে মাটি-পানিতে মিশে কাদায় একাকার হয়ে যায়। ফলে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল একেবারেই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে মোটরসাইকেল ও ছোট ছোট গাড়ির চালকরা। কাদা-মাটিতে একাকার হয়ে সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে যেতেও চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাটকেলঘাটা থেকে একটি মটর সাইকেলে তিন জন সাতক্ষীরা শহরে আসার পথে বিনেরপোতা বাইপাস সড়কের কাছে কাদামাটিতে ভেজা সড়কে হঠাৎ পিছলে পড়ে যায়। এসময় দ্রুতগতির একটি এ্যাম্বুলেন্স তাদেরকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলে আরোহীদের একজন ও হাসপাতলে আনার পর আরো একজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয় চালক। এভাবে সড়কে মাটি পড়ার কারণে বিনেরপোতা এলাকায় প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর কতিপয় ইটভাটার মালিকসহ মাটি ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে চলা ট্রাক্টর-ডাম্পার, ট্রলিতে করে ব্যাস্ততম সড়কটি দিয়ে নিয়মিত মাটি নিয়ে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ইটভাটায় বিক্রি করছে। ফলে শহরতলী কাশেমপুর বাইপাস মহাসড়ক, বিনেরপোতা মহাসড়ক, লাবসা দেবনগর সড়ক, মিলবাজার সড়ক, ছয়ঘিরিয়া-ঝাউডাঙ্গা সড়ক ও বৈকারী -বাবুলিয়া সড়ক, ইন্দিরা সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিগুলো এসব যানবাহন থেকে ছিটকে পড়া মাটিতে সামান্য বর্ষায় বাড়ছে ঝুঁকি। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মাটিবাহী বাহন থেকে অবিরাম পড়ছে এসব মাটি। সুষ্ক মৌসুমে এসব মাটি থেকে ধুলা আর বর্ষায় সৃষ্টি হয় কাদার। ফলে একদিকে ধুলা অন্যদিকে কাদায় ঐলাকায় বসবাসকারীদের পাশাপাশি পথচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে প্রতি মূহুর্তে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাটির অবস্থা এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটে চলাও দূরুহ হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে মাটি ব্যবসায়ী, অবৈধ ট্রাক্টর, ট্রলি মালিক ও ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।

এবিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মকর্তা বলেন, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু অবৈধ যানবহন চলাচলের বন্ধের দায়িত্ব পুলিশের। তবে বিষয়টি পুলিশকে জানানো দরকার।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, পরবর্তীতে মহাসড়ক ও সড়কে অবৈধভাবে মাটি নিয়ে কোন যানবহন চলাচল করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।